সিজারের পর দ্রুত সুস্থ হতে চান? মায়ের যত্নে এই ৮টি বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখুন
সিজারিয়ান ডেলিভারি বা সি-সেকশন একটি বড় অপারেশন। এই অপারেশনের পর একজন মায়ের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয়। প্রাকৃতিকভাবে জন্মদানের তুলনায় সিজারের পর সেরে উঠতে একটু বেশি সময় লাগে। তবে সঠিক নিয়মকানুন মেনে চললে এই প্রক্রিয়া অনেক সহজ এবং দ্রুততর হতে পারে।
আজকের এই ব্লগে আমরা সিজারের পর মায়ের যত্ন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব, যা আপনাকে বা আপনার প্রিয়জনকে দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সাহায্য করবে।
১. অপারেশনের কাটা স্থানের যত্ন :
সিজারের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো অপারেশনের কাটা স্থানের যত্ন নেওয়া। সংক্রমণ এড়াতে এটি অপরিহার্য।
- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা: ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতিদিন কাটা স্থানটি পরিষ্কার করুন। ভেজা বা স্যাঁতসেঁতে রাখা যাবে না।
- সংক্রমণের লক্ষণ: কাটা স্থান লাল হয়ে গেলে, ফুলে গেলে, ব্যথা বাড়লে বা কোনো ধরনের তরল বের হলে সঙ্গে সঙ্গে আপনার গাইনি বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করুন।
- আরামদায়ক পোশাক: সুতির ঢিলেঢালা পোশাক পরুন, যাতে কাটা স্থানে ঘষা না লাগে।
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম :
অপারেশনের পর শরীর দুর্বল থাকে, তাই পর্যাপ্ত বিশ্রাম অত্যন্ত জরুরি।
- ঘুম: শিশু যখন ঘুমাবে, তখন আপনিও ঘুমিয়ে নিন। রাতের ঘুমের পাশাপাশি দিনেও কয়েকবার বিশ্রাম নিন।
- ভারী কাজ এড়িয়ে চলুন: অপারেশনের পর অন্তত ৬-৮ সপ্তাহ কোনো ভারী জিনিস তোলা (যেমন: পানির বালতি, আসবাবপত্র), ঝুঁকে কাজ করা বা সিঁড়ি দিয়ে ঘন ঘন ওঠানামা করা থেকে বিরত থাকুন। এতে সেলাইয়ের উপর চাপ পড়তে পারে।
৩. পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ:
দ্রুত সেরে উঠতে এবং শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য মায়ের পুষ্টিকর খাবার খাওয়া প্রয়োজন।
কী খাবেন?
- প্রোটিন: মাছ, মাংস, ডিম এবং ডাল জাতীয় খাবার বেশি করে খান। প্রোটিন কাটা স্থান শুকাতে সাহায্য করে।
- ফাইবার: কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি, ফলমূল এবং লাল আটার রুটি খান। কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে মলত্যাগের সময় পেটে চাপ পড়লে সেলাইয়ে ব্যথা হতে পারে।
- পানি: শরীরকে সতেজ রাখতে এবং দুধের জোগান ঠিক রাখতে প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।
- আয়রন ও ক্যালসিয়াম: রক্তশূন্যতা রোধে আয়রন এবং হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার (যেমন: দুধ, দই, ছোট মাছ) গ্রহণ করুন।
কী এড়িয়ে চলবেন?
- অতিরিক্ত তেল-মশলাযুক্ত খাবার।
- বাইরের খাবার বা ফাস্ট ফুড।
- গ্যাস সৃষ্টি করে এমন খাবার (যেমন: ফুলকপি, বাঁধাকপি) পরিমিত পরিমাণে খান।
৪. হালকা হাঁটাচলা:
যদিও ভারী কাজ নিষেধ, তবে ডাক্তারের পরামর্শে হালকা হাঁটাচলা শুরু করা উচিত।
- রক্ত সঞ্চালন: অপারেশনের পরদিন থেকেই ধীরে ধীরে হাঁটার চেষ্টা করুন। এটি শরীরে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে এবং রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি কমায়।
- গ্যাস কমাতে সাহায্য করে: হাঁটাচলা পেটের গ্যাস কমাতে সাহায্য করে, যা সিজারের পর একটি সাধারণ সমস্যা।
৫. কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ :
সিজারের পর কোষ্ঠকাঠিন্য একটি বড় সমস্যা। এটি এড়াতে নিচের বিষয়গুলো খেয়াল রাখুন:
- প্রচুর পানি ও তরল খাবার গ্রহণ করুন।
- আঁশযুক্ত খাবার খান।
- প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ সেবন করতে পারেন।
৬. মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন:
প্রসব-পরবর্তী সময়ে অনেক মা শারীরিক কষ্টের পাশাপাশি মানসিক অবসাদ বা “পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন”-এ ভুগতে পারেন।
- কথা বলুন: নিজের অনুভূতিগুলো স্বামী বা পরিবারের সদস্যদের সাথে শেয়ার করুন।
- নিজের জন্য সময়: সবকিছুর মাঝে নিজের জন্য কিছুটা সময় বের করুন।
- সাহায্য নিন: যদি মন অতিরিক্ত খারাপ থাকে বা বাচ্চার যত্ন নিতে ইচ্ছে না করে, তবে দেরি না করে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা কাউন্সিলরের পরামর্শ নিন।
৭. শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সঠিক পদ্ধতি:
সিজারের পর বসে শিশুকে দুধ খাওয়ানো কষ্টকর হতে পারে।
- শুয়ে একপাশে কাত হয়ে শিশুকে দুধ খাওয়াতে পারেন।
- বসার সময় পিঠের পেছনে এবং কোলের উপর বালিশ ব্যবহার করুন, যাতে সেলাইয়ের উপর চাপ না পড়ে।
৮. কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন:
নিচের লক্ষণগুলো দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন:
- অতিরিক্ত জ্বর (১০০.৪° ফারেনহাইটের বেশি)।
- কাটা স্থানে তীব্র ব্যথা, ফোলা বা পুঁজ জমা।
- অতিরিক্ত রক্তস্রাব।
- পায়ে তীব্র ব্যথা বা পা ফুলে যাওয়া।
- প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া।
- তীব্র মন খারাপ বা হতাশা।
আপনার কাছাকাছি সেরা গাইনি ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞদের খুঁজে পেতে এবং জরুরি প্রয়োজনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করতে আমাদের Medilisting.com ডিরেক্টরি ব্যবহার করতে পারেন।
আরো পড়ুন- চলুন জেনে নেই বাংলাদেশের সেরা ১০ জন গাইনি ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞদের বিস্তারিত।
সিজারের পর মায়ের যত্ন নেওয়া শুধু মায়ের দ্রুত আরোগ্যের জন্যই নয়, বরং নবজাতকের সুস্থতার জন্যও জরুরি। পরিবারের সদস্যদের উচিত এই সময়ে মায়ের পাশে থাকা এবং তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সমর্থন জোগানো। সঠিক যত্ন ও ভালোবাসাই পারে একজন নতুন মাকে দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে।
(Disclaimer): এই ব্লগটি কেবল সাধারণ তথ্যের জন্য। যেকোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যার জন্য অবশ্যই একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। Medilisting.com সরাসরি কোনো চিকিৎসা সেবা প্রদান করে না।